চার গণমাধ্যম হামাসের হামলা সম্পর্কে জানত, ইসরায়েলের নতুন অভিযোগ

ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হামলার বিষয়ে চারটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আগে থেকেই জানত বলে অভিযোগ উঠেছে। ইসরায়েলপন্থী পর্যবেক্ষক সংস্থা অনেস্টরিপোর্টিংয়ে প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ অভিযোগ তোলা হয়েছে।

তবে চারটি সংবাদমাধ্যমই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সংবাদমাধ্যমগুলো হলো বার্তা সংস্থা রয়টার্স, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি), নিউইয়র্ক টাইমস ও সিএনএন।

অনেস্টরিপোর্টিং নিজেদের অলাভজনক সংস্থা হিসেবে দাবি করে থাকে। তাদের লক্ষ্য হলো সংবাদমাধ্যমগুলোর ইসরায়েলবিরোধী একপক্ষীয় অবস্থান প্রকাশ করা। গত বুধবার অনেস্টরিপোর্টিংয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়, হামাস যখন সীমান্ত অতিক্রম করে ইসরায়েলে ঢুকে পড়েছিল, তখন সেখানে গাজাভিত্তিক আলোকচিত্র সাংবাদিকেরাও ছিলেন। এ ধরনের আচরণ নৈতিকভাবে গুরুতর প্রশ্ন তুলছে।

নিবন্ধে আরও অভিযোগ করা হয়, হামাসের সঙ্গে ওই আলোকচিত্র সাংবাদিকদের সম্পৃক্ততা আছে। ওই আলোকচিত্র সাংবাদিকদের কাছ থেকে ছবি সংগ্রহ করার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো শত্রুপক্ষের ভূখণ্ডে হামাসের অনুপ্রবেশকে অনুমোদন দিয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে নিবন্ধে।

গত বুধবার অনেস্টরিপোর্টিংয়ে নিবন্ধটি প্রকাশ হওয়ার পর রয়টার্স, এপি, নিউইয়র্ক টাইমস ও সিএনএনের কাছ থেকে এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা চেয়েছে ইসরায়েল সরকার।

ইসরায়েলে হামাসের হামলার ব্যাপারে আগে থেকেই জানার অভিযোগ অস্বীকার করেছে রয়টার্স। তারা বলেছে, গাজাভিত্তিক দুজন ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফারের কাছ থেকে রয়টার্স ছবিগুলো পেয়েছিল। ৭ অক্টোবর সকালে ওই দুই ফটোগ্রাফার সীমান্তবর্তী এলাকায় কাজ করছিলেন। তাঁদের সঙ্গে আগে থেকে রয়টার্সের কোনো সম্পর্ক ছিল না। ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের হামলার দুই ঘণ্টা পর এবং বন্দুকধারীরা সীমান্ত অতিক্রম করে (ইসরায়েলে) ঢুকে পড়েছেন বলে ইসরায়েল সরকারের ঘোষণার ৪৫ মিনিট পর রয়টার্স ছবিগুলো প্রকাশ করেছিল।

অনেস্টরিপোর্টিংয়ের নিবন্ধে যেসব জায়গার কথা বলা হয়েছে, সেখানে রয়টার্সের সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন না বলেও উল্লেখ করেছে বার্তা সংস্থাটি।

এক বিবৃতিতে মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, ‘ফ্রিল্যান্সারের কাছ থেকে এপি প্রথম যেসব ছবি পেয়েছে, সেগুলো হামলা শুরুর এক ঘণ্টারও বেশি সময় পর তোলা হয়েছে। হামলার সময়ে সীমান্ত এলাকায় এপির কোনো সংবাদকর্মী উপস্থিত ছিলেন না। এপির কোনো কর্মী কখনো সীমান্ত অতিক্রম করেননি।’

বিবৃতিতে বার্তা সংস্থাটি আরও বলেছে, আলোকচিত্রী হাসান ইসলিয়াহর সঙ্গে তারা এখন আর কোনো কাজ করছে না। যে চার সাংবাদিক ওই হামলার ছবি তুলেছিলেন, তাঁদেরই একজন হাসান ইসলিয়াহ।

আরেক মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনও বলেছে, হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের সঙ্গে ছবিতে দেখা যাওয়া ওই আলোকচিত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে তারা।

ওই চার আলোকচিত্রীর মধ্যে ইউসেফ মাসুদ নামের একজনের সঙ্গে কাজ করেছে নিউইয়র্ক টাইমস। হামাসের হামলার ব্যাপারে আগে থেকে জানার অভিযোগটিকে ‘অসত্য ও আপত্তিকর’ বলে উল্লেখ করেছে সংবাদমাধ্যমটি।

এক বিবৃতিতে নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে, ‘সংঘাতের এলাকাগুলোয় কর্মরত ফ্রিল্যান্স আলোকচিত্র সাংবাদিকদের পক্ষেও আমরা কথা বলতে চাই। পেশাদারি জায়গা থেকে কোনো ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের ঝুঁকি নিয়েই ঘটনাস্থলে প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাৎকার নিতে হয় এবং গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো প্রকাশ করতে হয়। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে মুক্ত গণমাধ্যমকে অত্যাবশ্যকভাবে এ কাজ করতে হয়। ফ্রিল্যান্সারদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা এবং হুমকি-ধমকি দেওয়ার বিষয়টি উদ্বেগের। এতে তাঁরা বিপদে পড়েন। জনস্বার্থ–সংশ্লিষ্ট কাজের ওপর প্রভাব পড়ে।’

৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এতে ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি ইসরায়েলি নিহত হন। সেদিন থেকেই গাজায় নির্বিচার বোমা হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এক মাসের বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলের হামলায় ১০ হাজার ৮০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু।

Comments Off on চার গণমাধ্যম হামাসের হামলা সম্পর্কে জানত, ইসরায়েলের নতুন অভিযোগ